আমাদের ডিভাইসে অনেক ধরনের ফাইল থাকে। প্রতিনিয়ত আমরা নানা কাজে বিভিন্ন ধরনের ফাইল তৈরি করে থাকি এবং সেগুলো আমদের ডিভাইসে সংরক্ষণ করে রাখি। এমন অনেক ফাইল রয়েছে যা বর্তমানে আর ব্যবহার উপযোগী নয়। কিছু সময় আমরা সেগুলো মুছে ফেললেও বেশিরভাগ সময়ই কিছু ফাইল আমাদের ডিভাইসে পড়ে থেকে ডিভাইসের জায়গা দখল রাখে। এর থেকেও চিন্তার বিষয় হলো এসব ফাইল কোনো না কোনো সময় ডিভাইস ব্যবহারকারীর জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এজন্য এসব ফাইল কাজ শেষ হওয়ার পরপরই পরিপূর্ণভাবে মুছে ফেলা উচিত। এতে সুরক্ষার পাশাপাশি ডিভাইসে খালি জায়গা থাকবে যা পরবর্তী কাজের ফাইল রাখার জন্য সহজে ব্যবহার করা সম্ভব।
ডিভাইসের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও বিভিন্ন কাজের উদ্দেশ্যে অনেকের অনেক অ্যাকাউন্ট থাকে। যেমন- স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের ডকুমেন্ট, ফাইল এবং যোগাযোগের উদ্দেশ্যে তৈরি করা অ্যাকাউন্ট। আবার নিজের ব্যক্তিগত ফাইল এবং যোগাযোগের জন্যও আলাদা অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে থাকে। সাধারণত কোনো অফিস অথবা প্রতিষ্ঠান বদলের পর সেসব ডকুমেন্ট, ফাইল এবং যোগাযোগের ইতিহাস পরবর্তীতে তেমন প্রয়োজন পড়ে না। আবার অফিসের গোপনীয়তা নীতি অনুযায়ী সেসব প্রাতিষ্ঠানিক অ্যাকাউন্ট অফিস কর্তৃক মুছে ফেলা হয়, যা অনেকক্ষেত্রে মুছে ফেলা উচিতও। এতে তথ্য চুরি হওয়ার অথবা হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় এবং প্রতিষ্ঠানের গোপনীয়তা রক্ষা পায়। সাধারণত যে অ্যাকাউন্টগুলো ব্যবহৃত হয় না মানুষ সেগুলো তেমন গুরুত্ব দেয় না। যার ফলে সেসব অ্যাকাউন্টের সুরক্ষা করা হয়ে উঠে না। এজন্য সেগুলো হুমকির কারণ হয়ে উঠে। সুতরাং, এইসব অব্যবহৃত অ্যাকাউন্টগুলো প্রয়োজন শেষে মুছে ফেলা উচিত।
আমরা সাধারণত ডিভাইসের যে ফাইল অথবা ছবি বা ভিডিও মুছে ফেলতে চাই সে ফাইলে ডান ক্লিক করে তার ‘ডিলিট’ অপশন এ গিয়ে বর্তমান ফাইলটি ডিভাইস থেকে মুছে ফেলি। কিন্তু এভাবে ফাইলটি আদৌ ডিভাইস থেকে সম্পূর্ণভাবে মুছে যায় কি না তা কখনো আমরা লক্ষ্য করি কী? এই অবস্থায় ফাইলটি ডিভাইসের পর ‘রিসাইকেল বিন’ নামে একটি ফোল্ডারে গিয়ে জমা হয়। এই ফোল্ডার থেকে পুনরায় মুছে ফেলা ফাইলটি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। এজন্য কোনো ফাইল ডিভাইসের একটি নির্দিষ্ট ফোল্ডার থেকে মুছে ফেলার পর আবার ‘রিসাইকেল বিন’ নামের ফোল্ডারটায় গিয়ে ডান ক্লিক করে তার ‘পার্মানেন্ট ডিলিট’ অপশনে ক্লিক করলে ফাইলটি পুরোপুরি হার্ডডিস্ক থেকে মুছে ফেলা সম্ভব।
ফাইল বা ডকুমেন্ট পুরোপুরি মুছে ফেলার জন্য ডিভাইসের তৈরিকৃত বৈশিষ্ট্য ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট টুলস রয়েছে। যেমন- ‘ব্লিচবিট’ (BleachBit), ‘উইকিহাও’ (wikihow), ‘ফাইল সেডার’ (File Shredder), ‘এস-ডিলিট’ (SDelete) ইত্যাদি। এসব টুলস ডিভাইসে ডাউনলোড করে অপ্রয়োজনীয় ফাইল বা ডকুমেন্ট পুরোপুরি মুছে ফেলা সম্ভব। সাধারণত কোনো ফাইল মুছে ফেলার পর একটি নির্দিষ্ট টাইম পর্যন্ত সেগুলো পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। টুলসগুলো ব্যবহার করা হয় যাতে সেসব ফাইল পুনরায় ব্যবহার করা সম্ভব না হয়। এগুলো ছাড়াও এসব টুলস অন্যান্য সুরক্ষা সম্পর্কিত কাজ করতে সাহায্য করে।
‘ব্লিচবিট’(BleachBit) হলো একটি বিনামূল্যের ও ওপেন সোর্স ডিস্ক স্পেস ক্লিনার এবং গোপনীয়তা ব্যবস্থাপনা টুল, যা লিনাক্স এবং উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জন্য তৈরি। এটি ব্যবহারকারীদের অপ্রয়োজনীয় ফাইল ও ডেটা মুছে ডিস্ক স্পেস ফাঁকা করতে, গোপনীয়তা রক্ষা করতে এবং সিস্টেমের কর্মক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
আপনার কম্পিউটারের জায়গা যখন পূর্ণ হয়ে যায়, তখন ব্লিচবিট দ্রুত ডিস্ক স্পেস ফাঁকা করতে সাহায্য করে। যখন আপনার তথ্য শুধু আপনার নিজের ব্যাপার হওয়া উচিত, তখন BleachBit আপনার গোপনীয়তা রক্ষা করে। ব্লিচবিট ব্যবহার করে আপনি ক্যাশ মুছতে পারেন, কুকিজ ডিলিট করতে পারেন, ইন্টারনেট হিস্ট্রি পরিষ্কার করতে পারেন, অস্থায়ী ফাইল মুছতে পারেন, লগ ফাইল ডিলিট করতে পারেন এবং এমন জাঙ্ক ফাইলও সরাতে পারেন, যার অস্তিত্ব আপনার জানা ছিল না। এটি লিনাক্স এবং উইন্ডোজ সিস্টেমের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে এবং এটি ফায়ারফক্স (Firefox), এডোব ফ্ল্যাশ (Adobe Flash), গুগল ক্রম (Google Chrome), অপেরা (Opera) ইত্যাদির মতো হাজারো অ্যাপ্লিকেশন পরিষ্কার করে। শুধু ফাইল ডিলিট করার পাশাপাশি, ব্লিচবিট এডভান্স ফিচার যেমন ফাইল শ্রেডিং (ফাইল পুনরুদ্ধার অসম্ভব করে), ফ্রি ডিস্ক স্পেস মুছে ফেলা (অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশন দ্বারা মুছে ফেলা ফাইলের চিহ্ন লুকানোর জন্য), এবং Firefox ভ্যাকুয়ামিং (এটিকে দ্রুত করার জন্য) প্রদান করে।