আপনার বিভিন্ন ডিজিটাল একাউন্ট এবং ডিভাইসকে সুরক্ষিত রাখার উপায় হচ্ছে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা। শক্তিশালী পাসওয়ার্ডের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই পাসওয়ার্ড সহজে আন্দাজ করা যাবে না, দৈর্ঘ্যে লম্বা হবে এবং সংখ্যা/বিশেষ অক্ষর থাকবে। আবার একই পাসওয়ার্ড একাধিক একাউন্টে ব্যবহার করা নিরাপদ না কারণ কোন একটি সার্ভিস থেকে পাসওয়ার্ড কম্প্রোমাইজড হলে অন্য একাউন্টগুলোর নিরাপত্তাও হুমকির সম্মুখীন হয়ে যেতে পারে।
কিন্তু একেক একাউন্টে একেক পাসওয়ার্ড ব্যবহার করলে তা মনে রাখা বেশ কষ্টকর এবং পাসওয়ার্ডগুলো অনেকে কোথাও লিখে রাখেন বা ডকুমেন্ট ফাইলে লিখে ডিভাইসে রাখেন যা মোটেও নিরাপদ নয়। এই সমস্যার সমাধান দিতে পারে একটি সিকিউর পাসওয়ার্ড ম্যানেজার যা একই জায়গায় আপনার বিভিন্ন একাউন্টের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করলে আপনাকে শুধু একটি মাস্টার পাসওয়ার্ড মনে রাখতে হবে, সেই পাসওয়ার্ড দিয়ে পাসওয়ার্ড ম্যানেজারে ঢুকে আপনি বাকি একাউন্টগুলোর ভিন্ন ভিন্ন পাসওয়ার্ড এক্সেস করতে পারবেন।
পাসওয়ার্ড ক্লাউডে সংরক্ষণ করা হচ্ছে নাকি লোকালি আপনার ডিভাইসে সংরক্ষণ করা হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। আপনি যদি সহজে ব্যবহার করা যায়, বিভিন্ন ডিভাইসে সিংক করা যায় এবং একাধিক প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করা যায় এমন কোন পাসওয়ার্ড ম্যানেজার চান তাহলে আপনার জন্য একটি সমাধান হতে পারে Bitwarden Password Manager। G2 Bitwarden পাসওয়ার্ড ম্যানেজারকে টপ রেটিং দিয়েছে।
Bitwarden এর ফ্রি প্ল্যানেই আপনি পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের বেসিক ফিচারগুলো পেয়ে যাবে। Bitwarden ওপেন সোর্স, এবং ক্লাউডে সিংক থাকার কারণে আপনি আপনার যেকোন ডিভাইস থেকেই লগইন করে আপনার সংরক্ষিত পাসওয়ার্ডগুলো এক্সেস করতে পারবেন। Bitwarden এনক্রিপটেড ভাবে আপনার পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করে, অর্থাৎ প্ল্যাটফর্মের কাছে আপনার সেন্সিটিভ ইনফরমেশনের এক্সেস থাকে না।
ফ্রি প্ল্যানে Bitwarden সিকিউরড টেক্সট/ফাইল শেয়ারিং এর মত আরো কিছু সার্ভিস আপনাকে দেয় যেগুলোর ব্যাপারে এই আর্টিকেল থেকেই আপনি জানতে পারবেন।
কীভাবে ইন্সটল করবেন?
Bitwarden যেকোন প্ল্যাটফর্মেই ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ আপনি যেমন উইন্ডোজ, ম্যাক, লিনাক্সে ব্যবহার করতে পারবেন, একইভাবে মোবাইলেও গুগল প্লে স্টোর বা এপল প্লে স্টোর থেকেও ইন্সটল করতে পারবেন। এছাড়াও সরাসরি আপনার ব্রাউজারে ব্রাউজার এক্সটেনশন হিসেবেও Bitwarden ইন্সটল করতে পারবেন।
প্রথমে আপনাকে যেতে হবে www.bitwarden.com/download/ এই সাইটে। এই লিংকে গেলেই আপনি ব্রাউজার/পিসি/মোবাইলে ইন্সটল করার অপশন দেখতে পারবেন। পিসি বা মোবাইলে ইন্সটল করতে গেলে আপনি লিংকে ক্লিক করে এপ ইন্সটল করতে পারবেন। ব্রাউজারে ইন্সটল করতে হলে আপনি যেই ব্রাউজার ব্যবহার করছেন সেই ব্রাউজারের লিংকে ক্লিক করতে হবে। Chrome, Edge, Brave, Tor, Firefox, DuckDuckGo সহ মোটামুটিভাবে সব পরিচিত ব্রাউজারেই আপনি এই এক্সটেনশন যুক্ত করার অপশন পাবেন।
আপনি ক্রোমে এক্সটেনশন যুক্ত করতে চাইলে আপনাকে ক্রোম অপশনে গিয়ে Download অপশনে ক্লিক করতে হবে। এরপরে ক্রোম ওয়েব স্টোরে আপনাকে রিডিরেক্ট করা হলে সেখানে আপনাকে Add to Chrome অপশনে ক্লিক করতে হবে।
আপনার কাছে একটা ওয়ার্নিং আসতে পারে যে Bitwarden আপনার ওয়েবসাইট ডাটা রিড/চেঞ্জ করতে পারবে এটা জেনেও আপনি এই এক্সটেনশন এড করতে চান কিনা। এখানে আপনাকে Add Extension অপশনে ক্লিক করতে হবে। এখানে ডাটা রিড/চেঞ্জ করার কথা বলা হলেও Bitwarden আপনার পারসোনাল তথ্য চুরি করবে না, এই পারমিশন পাসওয়ার্ড ম্যানেজমেন্টের জন্য জরুরী।
এক্সটেনশন ব্রাউজারে যুক্ত হয়ে গেলে আপনি ব্রাউজারের উপরে ডান দিকে Bitwarden এর লোগো দেখতে পারবেন। যদি দেখতে না পান তাহলে এক্সটেনশনসে ক্লিক করে Bitwarden এর পাশের আইকনে ক্লিক করতে হবে ভিসিবিলিটি অন করার জন্য।
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
ইন্সটলেশন শেষে Bitwarden লোগোতে ক্লিক করলে আপনাকে সাইন ইন অথবা রেজিস্ট্রেশনের অপশন দেয়া হবে। প্রথমবারের মত Bitwarden ব্যবহার করতে গেলে আপনাকে নিচে Create Account অপশনে ক্লিক করতে হবে।
পরবর্তী পেজে আপনাকে নিজের ইমেইল এড্রেস দিতে হবে যেই ইমেইল এড্রেসের বিপরীতে আপনার Bitwarden একাউন্ট তৈরী হবে। এরপরে আপনাকে আপনার পছন্দমত একটি মাস্টার পাসওয়ার্ড দিতে হবে। মনে রাখা দরকার, এই মাস্টার পাসওয়ার্ডটাই একমাত্র পাসওয়ার্ড যা আপনাকে মনে রাখতে হবে। অতএব এই পাসওয়ার্ড শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি আপনাকে মনেও রাখতে হবে।
আপনার দেয়া পাসওয়ার্ড যথেষ্ট শক্তিশালী হলে আপনি সবুজ ইন্ডিকেটর এবং Strong শব্দটি দেখতে পারবেন। আপনি নিচে Check Data Breaches for this password অপশনে টিক করলে Bitwarden এই পর্যন্ত যেসব ডাটা ব্রিচ হয়েছে সেইগুলোতেও চেক করে দেখবে আপনার সিলেক্ট করা পাসওয়ার্ড ঐ ডাটা ব্রিচগুলোতে ছিল কিনা অর্থাৎ আপনার পাসওয়ার্ড কম্প্রোমাইজড কিনা। যেই পাসওয়ার্ড দিচ্ছেন তা কোন ডাটা ব্রিচে ছিল কিনা তা আপনি ম্যানুয়ালি চেক করতে পারবেন www.haveibeenpwned.com ওয়েবসাইট থেকে।
একাউন্ট তৈরী হয়ে গেলে আপনি লগইন করতে পারবেন আপনার ইমেইল আইডি এবং মাস্টার পাসওয়ার্ড দিয়ে।
লগইন করার পরেই আপনি পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ শুরু করতে পারবেন। নিচে Tab, Vault, Send, Generator এবং Settings নামের অপশন দেখতে পারবেন।
Bitwarden এক্সটেনশনে ক্লিক করে উপরে ডান দিকে “+” আইকনে ক্লিক করে আপনি নতুন আইটেম যুক্ত করতে পারবেন আপনার ভল্টে। সেই আইটেম কোন অনলাইন একাউন্টের লগইন ইনফরমেশন হইতে পারে, কোন Card এর ইনফরমেশন হতে পারে, কোন Identity রিলেটেড তথ্য হতে পারে অথবা কোন Secure note হতে পারে যেখানে আপনি কোন গোপনীয় তথ্য লিখে রাখতে পারবেন।
উদাহরণস্বরূপ আমরা একটি জিমেইল একাউন্টের লগইন ইনফরমেশন বিটওয়ার্ডেনে সেভ করি। প্রথমেই “+” অপশনে ক্লিক করার পরে অপশনে আসবে লগইন/কার্ড/আইডেন্টিটি/সিকিউরড নোট।
সেখান থেকে লগইনে ক্লিক করার পরে নতুন পেজে ওয়েবসাইটের নাম, আপনার একাউন্টের নাম, পাসওয়ার্ড, কোন অথেন্টিকেটর কী থাকলে সেই অথেন্টিকেটর কী এবং ওয়েবসাইটের ইউআরএল (Example:www.gmail.com) দিয়ে সাবমিট করলেই নতুন আইটেম তৈরী হয়ে যাবে।
Vault অপশনে গিয়ে আপনি এই পর্যন্ত যত ধরণের আইটেম যুক্ত করেছেন সেই আইটেমগুলো দেখতে, নতুন আইটেম যুক্ত করতে এবং আইটেমগুলোর ডিটেইলস পরিবর্তন করতে পারবেন।
Tab অপশন থেকে আপনি যেই ব্রাউজারের যেই ট্যাবে আছেন, সেই ট্যাবের ওয়েবসাইটে কোন একাউন্ট থাকলে সেই একাউন্টে Autofill এর মাধ্যমে সরাসরি লগইন করার অপশন পাবেন। যদি ঐ ট্যাবে থাকা ওয়েবসাইটের জন্য কোন একাউন্টের লগইন ইনফরমেশন ভল্টে সেভ করা না থাকে তাহলে There are no logins available for the current browser tab – এই বাক্য এবং Add a login অপশন দেখতে পারবেন।
কোন ওয়েবসাইটের জন্য যদি আপনার কোন লগইন বা অটোফিল অপশন এভেইলেবল থাকে, অর্থাৎ ঐ সাইটের জন্য কোন একাউন্টের নাম এবং পাসওয়ার্ড আগেই Bitwarden এ সেভ করে থাকেন তাহলে ব্রাউজারে উপরে কর্নারে Bitwarden লোগোর পাশে একটি সংখ্যা দেখতে পারবেন (1/2/..), আপনার কয়টি একাউন্টের লগইন ইনফরমেশন সেভ করা আছে তার ভিত্তিতে। একইসাথে সাইন ইন পেজে গেলে আপনাকে অটো লগইন প্রম্পট দেয়া হবে।
Bitwarden এর এই অটোফিল অপশনের কারণে আপনাকে বারবার ব্রাউজার এক্সটেনশনে গিয়ে আপনার প্রত্যেকটা একাউন্টের জন্য ভিন্ন ভিন্ন শক্তিশালী পাসওয়ার্ডগুলো আলাদা করে কপি করে আনার প্রয়োজন হয় না, ঐ ওয়েবসাইটে আপনি সরাসরি আপনার একাউন্টে লগইন করতে পারবেন।
অনেক সময় শক্তিশালী এবং নিরাপদ পাসওয়ার্ড নিজে থেকে চিন্তা করে বানানো বেশ কঠিন হয়ে যায়। Generator অপশন থেকে আপনি খুব সহজেই শক্তিশালী র্যানডম পাসওয়ার্ড এবং ইউজারনেম জেনারেট করে নিতে পারবেন। প্রয়োজনে পাসওয়ার্ডের জায়গায় পাসফ্রেজ (কোন বাক্য/বাক্যাংশ) জেনারেট করতে পারবেন। পাসওয়ার্ড/পাসফ্রেজে কতগুলো অক্ষর/শব্দ থাকবে কিনা, ওয়ার্ড সেপারেটর থাকবে কিনা বা সংখ্যা থাকবে কিনা এই অপশনগুলোও আপনি ব্যবহার করতে পারবেন পাসওয়ার্ড/ইউজারনেম জেনারেট করার সময়ে।
আপনি ব্রাউজার এক্সটেনশনের মাধ্যমে যেই তথ্যগুলো সংরক্ষণ করেছেন, আপনার মোবাইলে বিটওয়ার্ডেন এপ অথবা পিসিতে বিটওয়ার্ডেন সফটওয়্যার ইন্সটল করার পরে সেখানেও আপনি আপনার ইমেইল আইডি এবং মাস্টার পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করলে আগে সেভ করা সব তথ্যগুলোর এক্সেস পাবেন বিটওয়ার্ডেনের ক্লাউড বেজড সিংকিং এর কারণে।
যদি আপনি ক্লাউড বেজড সলিউশনের জায়গায় আপনার পাসওয়ার্ড লোকালি আপনার ডিভাইসে সংরক্ষণ করে এমন কোন পাসওয়ার্ড ম্যানেজার চান তাহলে আপনি KeepasXC ব্যবহার করতে পারেন।