ব্যক্তিগত ডিভাইস কিংবা কোন সাধারণ কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ অনেক সময় ঠিকমত কাজ করে না। অচেনা কেও তার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এক্ষেত্রে বলা হয় ডিভাইসটি ম্যালওয়্যার অথবা র‍্যানসমওয়্যার আক্রান্ত। এই অবস্থায় কোন একটি সফটওয়্যার পুরোপুরি ডিভাইসটির দখল নিয়ে নেয়, ফলে ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত কাজ করতে পারেনা । অনেকসময় নিয়ন্ত্রণকারী ডিভাইসটির মালিকের কাছে টাকাও দাবি করে।

ম্যালওয়্যার (Malware) হচ্ছে এক ধরনের খারাপ সফটওয়্যার, যেটি কম্পিউটার বা মোবাইলে ঢুকে নানা রকম ক্ষতি করে। যেমন:
–     জরুরি ফাইল নষ্ট করে দেয়া
–     পাসওয়ার্ড চুরি করা
–     ডিভাইস ধীরগতি করে দেয়া
–     ব্যক্তিগত গোপন তথ্যও চুরি করতে পারে

ম্যালওয়্যার অনেক ধরনের হয়। যেমন:
–      ভাইরাস ( ভাইরাস তৈরি করা হয় অপারেটিং সিস্টেমের কার্যক্ষমতা ব্যাহত করার জন্য । ডিভাইস ভাইরাস আক্রান্ত হলে অপারেটিং সিস্টেমের কার্যক্ষমতা ব্যাহত হওয়া এবং ডেটা হারিয়ে যেতে পারে)
–      ট্রোজান (ভালো সফটওয়্যার সেজে ঢুকে তথ্য চুরি করে, ব্যবহারকারীদের উপর গুপ্তচরবৃত্তি করে, অথবা আরও আক্রমণের জন্য সুযোগ তৈরি করে)
–      স্পাইওয়্যার (গোপনে আপনার কাজকর্ম দেখে বা ট্রাক করে)

র‍্যানসমওয়্যার (Ransomware) হচ্ছে এক বিশেষ ধরনের ম্যালওয়্যার। এটা ব্যবহারকারীর সব ফাইল তালাবন্ধ করে দেয় । র‍্যানসমওয়্যার আক্রান্ত হলে ব্যবহারকারী হঠাৎ দেখতে পান তিনি তার ফাইলগুলো আর খুলতে পারছেন না। একই সাথে তিনি মেসেজ পান – “টাকা দিলে ফাইল ফিরে পাবেন”।

র‍্যানসমওয়্যার যেভাবে কাজ করে-

  • ব্যবহারকারী কোনো ভুল লিংক বা ইমেইল অ্যাটাচমেন্ট এ প্রবেশ এর মাধ্যমে আক্রান্ত হয়।
  • র‍্যানসমওয়্যার সিস্টেমে প্রবেশ করে ফাইল এনক্রিপ্ট করে।
  • মুক্তিপণ দাবি করে (সাধারণত বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে টাকা দাবি করে)।
  • টাকা দিলেও অনেক সময় ফাইল ফেরত পাওয়া যায় না।

কিছু কুখ্যাত র‍্যানসমওয়্যার:

–      WannaCry (২০১৭ সালে সারা বিশ্বে হানাহানি করেছিল)
–      LockBit (বড় কোম্পানিগুলোকে টার্গেট করে)
–      REvil (অনেক বেশি টাকা দাবি করে)

ম্যালওয়্যার ও র‍্যানসমওয়্যার থেকে সুরক্ষার উপায়ঃ

  • সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য:
    –      অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করা। Windows Defender (মাইক্রোসফটের বিল্ট-ইন অ্যান্টিভাইরাস) চালু রাখা । প্রিমিয়াম অ্যান্টিভাইরাস (Kaspersky, Bitdefender, Norton) ব্যবহার করা ।
    –      সন্দেহজনক লিংক ও ইমেইল এড়িয়ে চলা। অপরিচিত ইমেইলের অ্যাটাচমেন্টে প্রবেশ না করা। ডাউনলোডের আগে URL চেক করা (যেমন: https:// থাকলে নিরাপদ)।
    –      সফটওয়্যার ও অপারেটিং সিস্টেম আপডেট রাখা। Windows, macOS, Android, iOS নিয়মিত আপডেট করা। Adobe Flash, Java, Browser (Chrome/Firefox) আপডেট করা।
    –      ডাটা ব্যাকআপ নেওয়া। ক্লাউড স্টোরেজ (Google Drive, OneDrive) ব্যবহার করা। প্রয়োজনে এক্সটার্নাল হার্ড ড্রাইভে নিয়মিত ব্যাকআপ রাখা।
    –      শক্তিশালী পাসওয়ার্ড (অক্ষর+সংখ্যা+চিহ্ন) ও Two-Factor Authentication (2FA) ব্যবহার করা। Gmail, Facebook, ব্যাংক একাউন্টে 2FA চালু করা।
  • কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য অতিরিক্ত সতর্কতা:
    –      ফায়ারওয়াল ও নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি ব্যবহার করা।
    –      এমপ্লয়ীদের এ বিষযে ট্রেনিং দেওয়া।
    –      র‍্যানসমওয়্যার প্রোটেকশন টুলস (যেমন: Acronis, Malwarebytes) ব্যবহার করা।

ডিভাইস ম্যালওয়্যার আক্রান্ত হলে যা করণীয়:
–       ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন (Wi-Fi/ ইথারনেট)।
–       অ্যান্টিভাইরাস দিয়ে স্ক্যান করুন।
–       সিস্টেম রিস্টোর (System Restore) অপশন ব্যবহার করুন।
–       পেশাদার সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।
–       মুক্তিপণ দিবেন না (এটি অপরাধীদের উৎসাহিত করে)।

ম্যালওয়্যার ও র‍্যানসমওয়্যার এর আক্রমণ দিন দিন বেড়ে চলেছে। সচেতনতা ও প্রযুক্তিগত সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করে আমরা এই ঝুঁকি কমাতে পারি। নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড এবং ডাটা ব্যাকআপ—এই তিনটি বিষয় মেনে চললেই বেশিরভাগ আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

A free in-person training is happening every month!