মোবাইল বা হার্ড ডিস্কে রাখা ফাইল, ছবি বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ করার পর তা হারালে বা ক্র্যাশ করলে বিপদে পড়তে হয়। ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের এই সকল প্রয়োজনীয় তথ্য নিরাপদ রাখতে প্রয়োজন এমন ব্যবস্থার যার ব্যবহার প্রয়োজনীয় তথ্য হারানোর ভয় কমায়। সাধারণ ডিভাইসের স্বল্প ধারণক্ষমতার স্টোরেজ সাধারণত অল্পদিনেই পূর্ণ হয়ে যায়। ফলে সকল ডেটা এক সাথে রাখার প্রয়োজন হয়। এসকল অসুবিধা দূর করতে ব্যবহার করতে পারেন ক্লাউড সার্ভিস। আপনার দরকার অনুযায়ী ক্লাউড সার্ভার ব্যবহার করুন এবং ডেটা সুরক্ষিত রাখুন।
‘ক্লাউড’ বা ‘মেঘ’ যেমন ভাসমান, তেমনি ‘ক্লাউড সার্ভিস’ বলতে অনলাইন সার্ভারগুলো বুঝায় যেখানে আপনি যেকোনো জায়গা থেকে যেকোনো ডিভাইস দিয়ে ইন্টারনেটের সাহায্যে আপনার প্রয়োজনীয় ডেটা অ্যাক্সেস করতে পারবেন। ডিজিটাল জগতে ব্যবহৃত জিমেইল, আউটলুক, গুগল ড্রাইভ, ড্রপবক্স, ওয়ানড্রাইভ, গুগল ফটো, মাইক্রোসফট, ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রামে আপলোড করা সকল ছবি, ফাইল এবং ডেটা যার যার নিজস্ব ক্লাউড সার্ভারে সংরক্ষিত থাকে। যারা অ্যাপেল ডিভাইস ব্যবহার করেন তাদের ডেটা অ্যাপেল স্টোরেজ আইক্লাউডে জমা হয়। ফলে আমরা জেনে-না জেনে প্রতিদিন ক্লাউড সার্ভিসগুলো ব্যবহার করে থাকি।
অফিস, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান এবং ছোট আইটি ফার্মগুলো সফটওয়্যার, প্ল্যাটফর্ম, এমনকি তাদের সার্ভার অবকাঠামো গঠনেও বিভিন্ন ধরনের ক্লাউড সার্ভিস ব্যবহার করে। এর সাহায্যে নিজস্ব অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো তৈরি, নিয়মিত আপডেট ও রক্ষণাবেক্ষণ করার যে খরচ করার প্রয়োজন হয় আইটি সেক্টরে তার আর দরকার পড়ে না। যেসব ক্লাউড পার্টনার বা ভেন্ডরকে ব্যবহার করে, তারাই এই দিকটা সামাল দেয়। বাস্তব অবকাঠামোর চেয়ে অনলাইন অবকাঠামো ও সার্ভার আন্তর্জাতিক ভাবে কাজ করা আরও সহজ করে তুলেছে এই ক্লাউড কোম্পানিগুলো। দেশ-বিদেশের সকল কর্মী ও ব্যবহারকারী এসব বিনা ঝামেলায় ব্যবহার করতে পারে।
এই ক্লাউড সার্ভারগুলো আইডি ও পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে অ্যাক্সেস করা যায়। এতে ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট ও ডেটা সুরক্ষিত থাকে। এর সাথে কোন কোন ডিভাইস দিয়ে লগইন ও অ্যাক্সেস করা হচ্ছে, এবং যে অ্যাক্সেস করছে সেই নির্ধারিত ব্যক্তি কিনা তাও ট্র্যাক করে ব্যবহারকারীর সেইফটি ও প্রাইভাসি নিশ্চিত করে। এক্ষেত্রে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA) চালু রাখা উচিত। অনলাইন সার্ভারগুলোর ক্ষেত্রে ঝুঁকি এড়াতে সতর্কতা অবলম্বন অত্যন্ত জরুরি।
এই সার্ভিসগুলো অনলাইন ভিত্তিক। ফলে ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়া এসব সুবিধা ব্যবহার করা সম্ভব না। এছাড়া সার্ভার ডাউন, অ্যাক্সেস করার সময় নেটওয়ার্ক সমস্যা, হ্যাকিং, অনলাইন অ্যাটাক, পাসওয়ার্ড ভুলে যাওয়া, অপ্রত্যাশিত অ্যাক্সেস ইত্যাদি সকল ঝুঁকি রয়েছে। সুতরাং, অফিস ও কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে অ্যাডমিন অ্যাক্সেস সীমিত রাখা, কোন কোন তথ্য কর্মী বা ব্যবহারকারী দেখতে পারবে অথবা কাজ করতে পারবে তা যথাযথ নির্ধারিত করে দেওয়া সকল ঝুঁকি থেকে দূরে রাখে।
ক্লাউড দুই ধরনের হয়ে থাকে – পাবলিক ক্লাউড ও প্রাইভেট ক্লাউড। পাবলিক ক্লাউড বলতে একটি বিল্ডিং-এ এক একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নেওয়ার মত বুঝায়। এতে সুবিধাগুলো ভাগ করে ব্যবহার করা হলেও এক ব্যক্তির তথ্য অন্য ব্যক্তি থেকে আলাদা ও সুরক্ষিত থাকে। প্রাইভেট ক্লাউড বলতে নিজের বাড়ির মতো। এখানের তত্ত্বাবধান ও রক্ষণাবেক্ষণের মালিক নির্দিষ্ট এক ব্যক্তি বা কোম্পানি। আবার প্রাইভেট ক্লাউডের দুই প্রকার রয়েছে। হোস্টেড প্রাইভেট ক্লাউড যা একটি থার্ড-পার্টি ক্লাউড প্রদানকারী সংস্থা দ্বারা পরিচালিত হয়। আর ইন্টারনাল প্রাইভেট ক্লাউড যা সম্পূর্ণভাবে একটি সংস্থার দ্বারা অভ্যন্তরীণভাবে পরিচালিত এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।