The Onion Router (TOR) বা সংক্ষেপে Tor ব্রাউজার হলো এক ধরনের ইন্টারনেট ব্রাউজার যেটি একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে অনলাইনে তার সম্পূর্ণ পরিচয় গোপন করার সুবিধা প্রদান করে। অর্থাৎ একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী তার IP ঠিকানা গোপন রেখে ইন্টারনেটে যেকোন সাইট বা তথ্য এক্সেস করতে পারেন।  এটি সম্পূর্ণরূপে ফ্রি এবং একটি ওপেন সোর্স ব্রাউজার যেটি কিনা পরিপূর্ণ গোপনীয়তা বজায় রেখে যেকোন ওয়েব ব্রাউজিং করতে সহায়তা করে। এটি ইন্টারনেটের সকল ট্রাফিক এনক্রিপটেড করে আপনাকে নিরাপদ রাখতে সহায়তা করে। 

আমাদের মধ্যে একটি ভ্রান্ত ধারনা রয়েছে যে, টর ব্রাউজার শুধুমাত্র ডার্ক ওয়েব ভিজিট করার জন্য ব্যবহার করা হয়। ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করার সক্ষমতা টর ব্রাউজারের অনেক গুলি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি।  টর ব্রাউজারে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা ও ব্যক্তিপরিচয় রক্ষার্থে টর নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়। টর নেটওয়ার্ক ব্যবহারের দুটি মূল বৈশিষ্ট্য রয়েছে:

  • ইন্টারনেটে আপনি কী করছেন বা কোন ওয়েবসাইটে যাচ্ছেন তার নাম বা অ্যাড্রেস আপনার ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী (আইএসপি) বা আপনার ইন্টারনেট সংযোগের ওপর স্থানীয় কেউ যদি নজরদারি করে তবে তা জানতে পারবে না।
  • আপনি কোনো ওয়েবসাইট বা সেবা ব্যবহার করার সময় সেগুলোর অপারেটর―বা তাদের ওপর নজর রাখছে এমন কেউ―আপনার প্রকৃত ইন্টারনেটের (আইপি) অ্যাড্রেস দেখতে পাবে না বরং দেখবে যে সংযোগটি টর নেটওয়ার্ক থেকে করা হয়েছে। ব্যক্তিপরিচয় সনাক্ত করা যাবে এমন কোনো তথ্য আপনি কোনোভাবে প্রকাশ না করলে কেউ আপনার পরিচয় বের করতে পারবে না।

এছাড়াও, ওয়েবসাইট যেন “ফিঙ্গারপ্রিন্টিং” করতে বা ব্রাউজারের কনফিগারেশন থেকে ব্যবহারকারীকে সনাক্ত করতে না পারে তার ব্যবস্থাও টর ব্রাউজারে বিদ্যমান।

ডিফল্ট সেটিংসে টর ব্রাউজার ব্যবহারকারীর কোনো ব্রাওজিং ইতিহাস (হিস্ট্রি) জমা রাখে না। আর একটি সেশন (টর ব্রাউজার বন্ধ করা বা নতুন পরিচয়গ্রহণ করার আগ পর্যন্ত সময়) শেষে হওয়ার পর সেই সেশনের কুকিও স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে ফেলা হয়।

টর ব্রাউজার কিভাবে কাজ করে?

টর হল ইন্টারনেটে গোপনীয়তা ও সুরক্ষা বৃদ্ধি করার জন্য ব্যবহৃত ভার্চুয়াল সুড়ঙ্গের একটি নেটওয়ার্ক। টর ব্যবহার করার সময় ব্যবহারকারীর ইন্টারনেট ট্রাফিক টর নেটওয়ার্কে অবস্থিত বিভিন্ন দেশে হাজার হাজার সার্ভারের (বা রিলে) মধ্যে থেকে দৈবচয়নে নির্বাচিত তিনটি সার্ভার দিয়ে ঘুরিয়ে আনা হয়। সার্কিটটির শেষ রিলে (“এক্সিট রিলে”) দিয়ে সেই ট্রাফিক টর নেটওয়ার্ক থেকে বের হয়ে পাবলিক ইন্টারনেটে যায়।

ওপরের ছবিতে একজন ব্যবহারকারী টর দিয়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে যাচ্ছেন। এখানে মাঝের সবুজ কম্পিউটারগুলো টর নেটওয়ার্কে রিলে প্রতিনিধিত্ব করে যেখানে চাবি তিনটি দিয়ে ব্যবহারকারী ও প্রতিটি রিলের মধ্যবর্তী এনক্রিপশনের স্তরকে বোঝানো হচ্ছে। এখানে প্রতিবার নতুন করে দৈবচয়নের ভিত্তিতে তিনটি সার্ভার নির্ধারিত হবে এবং এটি কেউ নিয়ন্ত্রণ করে না বলে কেউ জানে না আপনার সংযোগ কোথা থেকে স্থাপন করা হচ্ছে। 

টর ব্রাউজারের সুবিধা-

  • স্বাধীনভাবে যেকোন জায়গা থেকে ইন্টারনেট ব্রাউজিং করা যায়। 
  • অনলাইনে নিজের আইপি গোপন রেখে অনলাইন হ্যাকার এবং ইন্টারনেট প্রোভাইডারদের নজর থেকে দূরে থাকা যায়। 
  • ব্লক ওয়েবসাইট ব্রাউজ করা যায়। 
  • টর ব্রাউজার সম্পূর্ণ ফ্রি এবং ওপেনসোর্স একটি সফটওয়্যার।
  • এটি ইংরেজি ছাড়াও আরও অনেক ভাষা সাপোর্ট করে।
  • টর ব্রাউজারের উইন্ডোজ, লিনাক্স এবং ম্যাক সংস্করণ এখন সবার জন্য উন্মুক্ত।
  • টর ব্রাউজারের মাধ্যমে বিভিন্ন dark web ভিজিট করা সম্ভব।
  • জার্নালিস্টস কিংবা পলিটিক্যাল activists তাদের গবেষণার গোপন সোর্সগুলোকে tor network এর মাধ্যমে যেকোন ধরনের অনলাইন ট্র্যাকিং থেকে নিজেকে প্রোটেক্ট করতে পারে।
  • সর্বসাকুল্যে ইন্টারনেটে নিজের গোপনীয়তা বজায় রাখা যায়।

টর নেটওয়ার্ক ব্যবহারে নানান ধরনের  সুবিধার পাশাপাশি নিরাপদ ব্যবহারের উপায় না জানা থাকলে বা আপনি এর মাধ্যমে ডার্ক ওয়েব ভিজিট করলে বেশ কিছু ঝুঁকি রয়েছে। 

  • টর নেটওয়ার্কে এমন অনেক ওয়েবসাইট অথবা লিংক রয়েছে যেগুলোতে ভিজিট করা অনিরাপদ। এগুলো হ্যাকার (hacker) এবং বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের তৈরি করা এক ধরনের ফাঁদ। যেগুলো সহজেই আপনার ডিভাইস এবং ডিভাইসে থাকা ডাটা সমূহ হ্যাক করতে পারে।
  • এছাড়া ডার্ক ওয়েবসাইটগুলোতে যেহেতু সাধারণত ড্রাগ ব্যবসা, পাইরেটেড মুভি সম্প্রচার, এবং বিভিন্ন ধরনের দেশি অথবা আন্তর্জাতিক ক্রাইম পরিচালনা করা হয় সেহেতু এসমস্ত ওয়েবসাইট ভিজিট করা নিঃসন্দেহে ঝুঁকিপূর্ণ।
  • ব্রাউজিং এর ক্ষেত্রে টর ব্রাউজার অন্যান্য সাধারণ ব্রাউজারের তুলনায় কিছুটা স্লো হতে পারে। কেননা টর নেটওয়ার্কে আপনার অনুরোধটি তিনটি ভিন্ন ভিন্ন দেশ বা অবস্থানে স্থাপিত সংযোগ অতিক্রম করে নির্ধারিত ঠিকানায় পৌঁছায়, সেক্ষেত্রে এর ব্রাউজিং স্পিড অনেক সময় ধীর হতে পারে।
  • Tor browser সবসময় ব্যক্তির গোপনীয়তা বজায় রাখতে সক্ষম নাও হতে পারে। কারন, আপনি জখন টর ব্রাউজারের মাধ্যমে টর নেটওয়ার্কে যুক্ত হন তখন আপনার ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বা আপনার উপর নজরদারি করছে এমন কেউ বুঝতে পারবে যে আপনি টর ব্যবহার করছেন। কিন্তু তারা এটা বুঝতে পারবে না যে আপনি কি কি করছেন। 

টর ব্রাউজার ব্যবহারে যে ঝুঁকিগুলো রয়েছে সে সম্পর্কে আশা করি এতক্ষণে পরিষ্কার হয়েছে। সুতরাং এই ধরনের ব্রাউজার ব্যবহারের পূর্বে নিজের সুরক্ষার জন্য অবশ্যই প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেমন-

  • কম্পিউটার অথবা স্মার্টফোন যে ডিভাইস থেকেই টর ইউজ করবেন না কেন সে ডিভাইসে অবশ্যই আগে থেকে একটি শক্তিশালী এন্টিভাইরাস (antivirus) সফটওয়্যার ইন্সটল করুন।
  • টর ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই একটি ভালো মানের এবং সিকিউর ভিপিএন (VPN) ব্যবহার করুন। এর ফলে আপনার আইপি অ্যাড্রেস (IP Address) গোপন থাকবে।
  • নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বস্ত  ওয়েবসাইট ব্যতীত অন্য যে কোন ওয়েবসাইট টর ব্রাউজার দ্বারা browsing করা থেকে বিরত থাকুন। 

টর ব্রাউজার ডাউনলোড করতে এখানে যান- https://torproject.org/ 

এটি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে অফিসিয়াল ম্যানুয়াল দেখতে পারেন- https://tb-manual.torproject.org/bn/about/

A free in-person training is happening every month!