বর্তমানে ব্যক্তিগত ও পেশাদার কাজে আমরা প্রতিনিয়ত নানা ধরণের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে থাকি। এছাড়া সামাজিক মাধ্যমে ছবি ও তথ্যও শেয়ার করি। জীবনযাত্রা সহজ করতে কিংবা বিনোদনের উদ্দেশ্যে প্রতিনিয়ত আমাদের প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় সকল তথ্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে দিয়ে যাচ্ছি। এই অভ্যাস আমাদের জীবনকে যেমন সহজ করেছে, তেমনি তৈরি করেছে নানা রকম নিরাপত্তা ঝুঁকি। সামান্য অসাবধানতা বা অজ্ঞতা হয়ে উঠতে পারে আমাদের ক্ষতির কারণ। তবে আমরা কি জানি, এই ঝুঁকিগুলো আসলে কোথায়? কেন আমাদের আরও সতর্ক হওয়া দরকার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে?
যেকোনো উৎসবের সময় জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম নিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতে কিছু অসাধু চক্র। তারা বিভিন্ন কৌশলে ব্যবহারকারীদের থেকে তাদের সামাজিক মাধ্যমের ইউজার আইডি, পাসওয়ার্ড নিয়ে আইডি দখল করার চেষ্টা করে। কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের চেষ্টা করে। ফলে অনেকেই আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। তাই, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কোন কোন ঝুঁকি রয়েছে এবং সামান্য অসাবধানতায় কিভাবে মানহানি, আর্থিক ক্ষতি বা মানসিক বিপর্যয় ঘটতে পারে— তা জানা ও বোঝা জরুরি।
ডিজিটাল জগতে ব্যবহারকারীরা সাধারণত যেসব সাইবার হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন:
১/ হ্যাকিংঃ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে কোনো ব্যক্তি আপনার সামাজিক মাধ্যম, ইমেইল বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করে বা করার চেষ্টা করে থাকে।
২/ ফিশিংঃ কোন জাল ওয়েবসাইট, লিংক দিয়ে কিংবা মেসেজের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের লগইন আইডি ও পাসওয়ার্ড কৌশলে নিয়ে নেয়।
৩/ ম্যালওয়্যারঃ ক্ষতিকর সফটওয়্যার বা ভাইরাসের মাধ্যমে ডিভাইস (মোবাইল, কম্পিউটার) নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়া হয়।
৪/ র্যানসমওয়্যারঃ ভাইরাস দিয়ে ডিভাইস লক করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
৫/ ডেটা ব্রিচ বা লিকঃ আপনার অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হয় বা অনলাইনে প্রকাশ পায়, যা মানহানির ঝুঁকি তৈরি করে।
ডিজিটাল জগতে আপনার প্রথমে জানা প্রয়োজন কোন ক্ষেত্রে ঝুঁকির মাত্রা কিরকম হতে পারে এবং সে অনুযায়ী তা প্রতিরোধ করা। যেমন-
- কোড নাম্বার থেকে ফোন বা মেসেজ, স্প্যাম মেইল এগুলো তুলনামুলক কম ঝুঁকিপূর্ণ। এসবে মূলত ফিশিং লিংকগুলো দেয়া হয়। সাধারণত জিমেইলের সিকিউরিটি চেক থেকেই স্প্যাম মেইলগুলো স্প্যাম সেকশনে জমা পড়ে থাকে। আপনার অ্যাকাউন্টকে সুরক্ষিত রাখার জন্য এসব মেইল, মেসেজ বা কল এড়িয়ে যাওয়া উচিত। প্রয়োজন ছাড়া কোন ওয়েবসাইট সাবস্ক্রাইব করবেন না। এতে স্প্যাম মেইল কম জমা হবে।
- সাইবার বুলিং, স্টকিং বা ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট অনুসরণ করা, ফিশিং অ্যাটাক ও নানা ধরণের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট হ্যাক হচ্ছে মাঝারি ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেয়া উচিত। ডিজিটাল মাধ্যমে নিজে এবং নিজের অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখতে ব্যক্তিগত তথ্য না শেয়ার করা বা কম শেয়ার করা। নিজের আইডি ও পাসওয়ার্ড গোপন রাখা।
- ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাক, ম্যালওয়্যার অ্যাটাক, ডিভাইস লক করে মুক্তিপণ দাবি, অফিস বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সিস্টেম হ্যাক, ব্যক্তিগত বা গোপনীয় কোন ছবি বা তথ্য ভাইরাল করে টাকা চেয়ে ব্ল্যাকমেইল এর মতো বিষয়গুলো অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব সরাসরি আইনের সহায়তা নিতে হবে এবং বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চালাতে হবে। এসব ক্ষেত্রে ব্যক্তি সম্মানহানী বা আর্থিক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। অনেকক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর মৃত্যুঝুঁকি তৈরি হয়। তাই, এসব সংবেদনশীল ঘটনা অতি গুরুত্ব ও সাবধানতার সঙ্গে সামলাতে হয়।
এছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে যেসব প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবেন তা হল—
- পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করুন (যেমন: Bitwarden)।
- টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA) চালু করুন।
- অ্যান্টিভাইরাস ইনস্টল করুন (যেমন: Kaspersky)।
- অপরিচিত লিংক/অ্যাটাচমেন্ট এড়িয়ে চলুন।
- ডেটা ব্যাকআপ রাখুন (Google Drive, External Hard Disk)।
- নিয়মিত আপনার পাসওয়ার্ড, অ্যাকাউন্ট লগইন হিস্ট্রি এবং কুকিজ মনিটরিং করুন।
- আপনার ডেটা লিক হয়েছে কি না তা “Have I Been Pwned?” ওয়েবসাইটে চেক করুন।
সচেতনতাই পারে এসব সাইবার ঝুঁকি থেকে আমাদের রক্ষা করতে। এজন্য নিয়মিত ডিজিটাল সুরক্ষা নীতি মেনে চলুন এবং অনলাইন অ্যাকাউন্টগুলো সুরক্ষিত রাখুন।