বর্তমানে স্মার্টফোন আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি এখন একটি কম্পিউটারের সকল কাজ করতে পারে, ক্ষেত্র বিশেষে তার থেকেও বেশি কিছু করতে পারে। এই সক্ষমতার কারনে আমরা এই ডিভাইসে নানান সংবেদনশীল তথ্য সংরক্ষণ থেকে শুরু করে ওয়েবসাইট ব্রাউজ করা সহ আমাদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টসমূহ অ্যাক্সেস করি। আর এই কারনে এটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অবিশ্বাস্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এখন আমরা মোবাইল ফোনের নিরাপদ ব্যবহার সম্পর্কে জানবো। 

নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা বাড়ানোর উপায়
  • আপনার ফোনে একটি পাসকোড সেট করুন। বেশিরভাগ ফোন ৪-সংখ্যার পাসকোড সেট করতে বলে, কিছু ফোনে আঙ্গুলের ছাপ বা মুখের অবয়ব ব্যবহার করে আরও জটিল পাসকোড, প্যাটার্ন বা বায়োমেট্রিক লক সেট করার সুযোগ রয়েছে। 
  • আপনার ফোনের অনলাইন অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত করুন। ফোনগুলিতে সাধারণত ফোন কোম্পানির সাথে একটি অনলাইন অ্যাকাউন্ট থাকে এবং  যেখানে ব্যক্তিগত ডেটা সংরক্ষণ করার জন্য একটি ক্লাউড অ্যাকাউন্ট থাকে (Google বা iCloud অ্যাকাউন্ট)। ঐ অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা সেটিংস পর্যালোচনা করুন এবং অন্য কেউ যেন আপনার তথ্য অ্যাক্সেস করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে আপনার ফোন এবং ক্লাউড অ্যাকাউন্টে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
  • আপনার ফোনে অ্যান্টি-ভাইরাস এবং অ্যান্টি-স্পাইওয়্যার সফ্টওয়্যার ব্যবহার করুন। কম্পিউটারের মতই আপনার ফোনে অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার রাখা জরুরী। অ্যাপ স্টোর বা প্লে স্টোর থেকে ভাল সুনাম রয়েছে এমন একটি অ্যান্টি-ভাইরাস আপনার ফোনে ডাউনলোড করুন এবং তা নিয়মিত হালনাগাদ রাখার পাশাপাশি স্ক্যান করুন। 
  • লোকেশন শেয়ারিং বন্ধ করুন। বর্তমানে প্রায় সকল স্মার্টফোনে GPS রয়েছে যা আপনার অবস্থান চিহ্নিত করতে পারে এবং বিভিন্ন অ্যাপ আপনার সেই অবস্থানের তথ্য জানতে পারে ও সংরক্ষণ করে ৷ আপনি ফোন সেটিংস থেকে আপনি আপনার লোকেশন কোন কোন অ্যাপের সাথে শেয়ার করতে চান বা বন্ধ করতে চান তা সেট করতে পারেন। অনেকে মনে করেন যে, সুধু মাত্র স্মার্টফোন বা GPS রয়েছে এমন সকল ফোন ব্যবহার করা হলেই তাদের লোকেশন দেখা যায়। কথাটি সত্য নয়, মোবাইল সেবা দাতা প্রতিষ্ঠান আপনার সিমের সংযোগের সাথে তাদের টাওয়ারের দূরত্ব হিসাব করে আপনার অবস্থানের সঠিক তথ্য বের করতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি আপনার অবস্থানের তথ্য কাউকে জানাতে না চাইলে সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখুন বা বাড়ি থেকে বের হবার পূর্বেই GPS বন্ধ করে সিম কার্ড খুলে ফেলুন। 
  • আপনার ফোনের গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা সেটিংস পরীক্ষা করুন। বেশিরভাগ ফোনে এই সেটিংস থাকে যা আপনাকে আপনার গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ করতে দেয়। আপনি কোন কোন অ্যাপকে মাইক্রোফোনের অনুমতি দিবেন, লোকেশনের তথ্য দিবেন, আপনার সংরক্ষণ করে রাখা নাম্বার গুলি দেখতে দিবেন বা আপনার ফোনের মিডিয়া গ্যালারিতে অ্যাক্সেস দিবেন তা পর্যালোচনা করুন। 
  • অ্যাপ এবং অ্যাকাউন্ট থেকে লগ আউট করুন। ব্যবহার করা শেষে ফোনে বিদ্যমান অ্যাকাউন্টগুলি থেকে লগ আউট করার কথা বিবেচনা করুন যাতে অন্যরা আপনার ফোনে অ্যাক্সেস পেলে আপনার অ্যাকাউন্টগুলিতে প্রবেশ করতে না পারে৷ এটা ক্ষেত্রবিশেষ  অসুবিধাজনক হতে পারে, তবে নিজের গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা ঝুঁকির উপর ভিত্তি করে আপনার সিদ্ধান্ত নিন।
  • অ্যাপ ডাউনলোডে সতর্ক হন। অ্যাপ ইন্সটল করার পূর্বে নিশ্চিত হন অ্যাপটি কোন কোন তথ্যে প্রবেশে অনুমতি চাইছে।  আপনি যদি আপনার ফোনে কোন অপরিচিত অ্যাপ খুঁজে পান, তাহলে সেটি মুছে ফেলুন।
  • আপনার ফোনে সংবেদনশীল তথ্য সংরক্ষণ না করার চেষ্টা করুন। আপনার ফোনে আপনার কাছে যত কম সংবেদনশীল তথ্য থাকবে, অন্য কেউ এটি অ্যাক্সেস করার সম্ভাবনা তত কম। সব সময় প্রয়োজন পড়ছে না এমন সব সংবেদনশীল তথ্য অন্য কোথাও নিরাপদে সংরক্ষণ করুন৷ আপনি Nextcloud এর মত নিরাপদ ক্লাউড স্টোরেজের কোথা বিবেচনা করতে পারেন। 
  • মোবাইল ফোনে যোগাযোগের জন্য এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন সমর্থিত অ্যাপ ব্যবহার করুন। সাধারণ ফোন কল বা এসএমএস নিরাপদ নয়, এগুলি পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান রেকর্ড করে রাখে এবং যেখানে বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংস্থার প্রবেশাধিকার রয়েছে। মোবাইল ফোনে নিরাপদে যোগাযোগের জন্য নানান অ্যাপ রয়েছে তবে সবগুলিই আপনার জন্য উপযোগী নাও হতে পারে। আপনার ঝুঁকি এবং নিরাপত্তা বিবেচনায় কোনটি আপনার জন্য অধিকতর উপুজুক্ত তা আপনি https://www.securemessagingapps.com/ সাইট থেকে তুলনা করে দেখতে পারেন। 
এনক্রিপটেড মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করতে নিচের বিষয়গুলি বিবেচনায় রাখুন:
  • অ্যাপটির মালিকানা কাদের, তারা ব্যবহারকারীর কোন কোন তথ্য সংগ্রহ করে এবং সেই তথ্য ইতিপূর্বে কাউকে দেওয়া হয়েছে কিনা তা নিয়ে গবেষণা করুন। ব্যবহারকারীর তথ্য শেয়ার করার অনুরোধে তাদের নীতি কী তা পরীক্ষা করুন। 
  • অ্যাপটি সুরক্ষিত রাখতে পিন বা পাসকোড দিয়ে অ্যাপটি লক করুন।
  • আপনার মেসেজিং অ্যাপে পাঠানো তথ্য যেমন ফটো বা ডকুমেন্ট আপনার ফোনে কোথায় সংরক্ষিত হচ্ছে তা পরীক্ষা করুন।
  • ছবি বা অন্যান্য ফাইল যা আপনি ডাউনলোড করেন তা আপনার ডিভাইসে সংরক্ষিত থাকে। এগুলির নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন, বিশেষ করে যখন আপনি আপনার ডেটা ব্যাক আপ করেন।
  • হোয়াটসঅ্যাপের মতো কিছু অ্যাপ, ক্লাউড অ্যাকাউন্টে আপনার বার্তা সামগ্রীর ব্যাকআপ রাখার অপশন দেয়। আপনি অ্যাপের সেটিংস থেকে ক্লাউড ব্যাকআপের জন্য এনক্রিপশন চালু করতে পারেন। সেই ব্যাকআপের জন্য একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড সেট করুন। আপনি যদি ব্যাকআপ রাখতে না চান, আপনি সেটিংস থেকে সেটি বন্ধ করতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে আপনি অ্যাপটি আনইনস্টল করলে আপনার সকল বার্তা সহ অ্যাপের মধ্যে সংরক্ষিত সমস্ত তথ্য হারাবেন। iOS ব্যবহারকারীরা Siganl ব্যবহার করলে, আপনার কল বা বার্তা iCloud এ ব্যাকআপ হবে। আপনি চাইলে অ্যাপ সেটিংস থেকে এটি বন্ধ করতে পারেন।
  • আপনার ফোনে সংরক্ষিত নাম্বারগুলি মেসেজিং অ্যাপ এবং ক্লাউড অ্যাকাউন্টের সাথে সিঙ্ক হয়, তাই আপনি কোন নম্বর এক জায়গায় মুছে দিলে সেগুলি অন্য কোথাও সংরক্ষিত থাকতে পারে।
  • স্পর্শকাতর বার্তাগুলি নিয়মিত মুছে ফেলুন বা সিগন্যাল এবং হোয়াটসঅ্যাপে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া বার্তা ফাংশন চালু করুন। যা আপনাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বার্তাগুলি মুছে ফেলার সুযোগ দেয়। 
  • সিগন্যাল এবং হোয়াটসঅ্যাপ উভয়ে ফটো এবং ভিডিও দেখা হয়ে গেলে সেটি মুছে ফেলার মত সেটিং রয়েছে। আপনি যদি সংবেদনশীল ছবি বা ভিডিও পাঠান তবে এটি সেট করতে পারেন।
A free in-person training is happening every month!